অতৃপ্ত



অতৃপ্ত

by Soumyajyoti Karmakar

ছেলে বড় হবে, ভালো রেজাল্ট করবে , একটা ভালো এঞ্জিনীর হবে , তারপর সুন্দর একটা মেয়ে দেখে বিয়ে দেব । তারপর একটা নতুন সদস্য যারা আমার আর তোর বাবার খেলার সঙ্গী হবে। এই শুনেই বড় হয়েছে কেশব ;কেশব দত্ত । বড় হলো ক্লাস টুইলভ পাস করলো , এঞ্জিনীরিং পড়তে চলে গেল। দিন কি আর থেমে থাকে । বাবা অবসর প্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী আর মা বাড়ির কাজ এ করে । মাঝে মাঝে বাড়ি আসার পর ছেলেকে ফোনে কথা বলতে শুনতো কেশবের মা। প্রথম কদিন বন্ধুদের সাথে কথা বলছিল বলে কাটিয়ে দিয়েছিল।  তার পর দিন ছেলেকে সেজে গুজে বেরোতে দেখেছে । যে ছেলে কোনোদিন সাজা তো দূরের কথা বেরোতোই না বাড়ির বাইরে তার এই আমূল পরিবর্তন দেখে মা বিস্মিত । 
কয়েকদিন পর বাড়ির পাশের এক কাকিমা খবর দিলো কেশব এক বান্ধবীর সাথে ঘুরতে দেখেছে। কেশব বাড়িতে আসলে মা জিগেস করলো বললো ও কেউ না। আবার জিগেস করাতে বললো যে ওই ওদের ক্লাসমেট সুমনা এর সাথে দেখা করতে গেছিল , অনেক দিন দেখা হয় না তো তাই ওই রিউনিয়ন আর কি। মা জিগেস করলো যে ওই সেই সুমনা , সুমনা মুখার্জী ; যার বাবা ইনকাম ট্যাক্স অফিসার ? উত্তর দিলো হ্যাঁ।
দু বছর বাদে ছেলে এঞ্জিনীরিং পাস করলো ,চাকরি ও পেলো কলকাতাতেই । বাড়িতে তবুও সে মুখ খুলে কিছু বলতে পারল না তার সম্পর্কের কথা। এদিকে সুমনা এর সাথে তার প্রেম তুঙ্গে । মা সব এ বুঝতে পারে। অফিসে এ একদিন কেশব অজ্ঞান হয়ে যায় ডক্টর প্রেসর মেপে বললো খুব কম প্রেসর । তার পর থেকে প্রায় বলতে থাকতো যে মাথায় যন্ত্রনা করছে । মাথার আর দোষ কি । সারাদিন ফোনে আর ল্যাপটপ এ চোখ আর কি হবে। মাথা যন্ত্রনা করলেই একটা করে পেইন কিলার খায় । 
 বাবা একদিন বললো যে কেশব এবার তো একটা বৌমা দেখতে হবে , খবর কাগজে লিখে দেওয়া ভালো। ছেলে লজ্জা পেয়ে বললো কি যে বলো না এখন দেরি আছে। মা এসে বললো তাহলে তোর সুমনা কে কি করছে ! ওকে কিছু বলে দেখ ।ও তো খুব ভালো মেয়ে। কেশব ওর ঘরে চলে গেল । আজকাল আবার ছেলে ফোনে তা সাইলেন্ট করে রাখে মা বললো। 
 কেশব বললো সব কথা সুমনা কে সুমনা খুব ডানপিটে মেয়ে সে এককথায় বাড়িতে জানালো । মা বাবা এক কথায় না বলে দিল । কারণ জানতে চাইলো সুমনা , কারণে বললো ছেলে তা প্রথমত একটা ছাপোষা এঞ্জিনীর আর আই টি সেক্টর এ কখন কি হয় কিছু বলার নেই, আর দ্বিতীয়ত ওরা নিচু জাত ,  তাদের প্রচুর পরিচিতি আছে। যে বিয়ে কোনোরকমেই সম্ভব না। 
 এ কথা প্রথমে কেশব কে বলে এবং একদিন কেশব এর বাড়িতে এসে সুমনা , কেশব এর মা ও একটু দিশেহারা ছিল । সুমনা অনেকবার বলেছে কেশবকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করতে । কখনো কেশব বলে এভাবে কিছু করা ঠিক হবে না কখনো বলে এখনো অনেক সময় আছে। কেশব এর মতন সৎ ছেলে এসব কি করেই বা করবে।
এদিকে কেসবের শরীরের দিন দিন অবনতি হতে লাগলো। ব্রেইন এ সিটি স্ক্যান করতে বললো ডক্টর । স্ক্যান এ ধরা পড়লো টিউমার হয়েছে ব্রেইন এ। 
এভাবে আজ কেমো থেরাপি কাল এই ওষুধ সেই ডক্টর করে অপরাশন এর ডেট দিলো ডক্টর। সুমনা দেখা করতে এলো কেশব বললো আমি যেখানেই থাকি যায় তোর সাথে আছি পাশে আছি । শুনে সুমনা খুব কান্না কাটি করলো । অপেরাশন হলো কেশব এর জ্ঞান আর ফিরলোনা । সে চিরতরে ঘুমিয়ে পড়েছে।
কয়েকমাস পরে সুমনার বাবা তার এ অফিসে এর এক নতুন অফিস কর্মীর সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। প্রথম মৃত্যু বার্ষিকিতে কেশব এর মা সুমনা এর কথা জিগেস করলো , কেশব এর বাবা বললো সে বিয়ে করেছে আর সুখী নেই সংসারে খুব অশান্তি তার। কেশব এর মা বললো সুমকনা তো কেশব এর জন্যে এ ছিল অন্য কথা সুখী কি করে হবে। মিথ্যে বলেছিল কারণ ছেলে হারানোর কষ্ট যদি সে সুমনা ও ভালো নেই সেটা শুনে তার সঙ্গে সেই কষ্ট ভাগ করে নিতে পারে। কয়েকদিন পর সুমনা ফোনে করলো বললো সে আসছে । সে একা এসেছিল। কথা বলে চলে যাওয়ার পর কেশব এর মা বাবা কে জিগেস করলো সুমনার চেহারা অত খারাপ হয়ে গেছে কেনো , চোখে কালি পড়েছে। বললো ওর সংসারে খুব ধকল যায় , শাশুড়ি খুব জাঁদরেল । 
কিন্তু তা না , সুমনা খুব ভালো আছে তার স্বামী খুব ভালো সে ও আস্তে চেয়েছিল কেশব এর বাড়িতে তার একটা বাচ্চা ও হয়েছে তিন মাস বয়স। কারণ কেশব হোক বা কেশব এর আশীর্বাদ সুমনার সাথে আছে খারাপ কি থাকতে পারে সে?
          

Comments

Popular Posts